ক্রিমি লেয়ার (creamy layer) একটি সীমা নির্ধারণ করে যার মধ্যে ওবিসি রিজার্ভেশন সুবিধা প্রযোজ্য হয়ে থাকে। সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওবিসিদের জন্য ২৭% কোটা থাকলেও, যারা “ক্রিমি লেয়ার” এর মধ্যে পড়ে তারা এই কোটার সুবিধা পেতে পারে না। প্রসঙ্গত ওবিসিদের মধ্যে ক্রিমি লেয়ার” সংজ্ঞায়িত করার মানদণ্ড সংশোধনের একটি প্রস্তাব বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে, এবং সংসদ সদস্যরা সংসদের বর্ষা অধিবেশনের সময় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
দ্বিতীয় বাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশনের (মন্ডল কমিশন) দেশের ভিত্তিতে তৎকালীন গভারমেন্ট ১৩ ই আগস্ট ১৯৯০ সালে সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়েপড়া শ্রেণী (ওবিসি) দের ২৭ % রিজার্ভেশন প্রকাশ করেছিল যেখানে সিভিল পোস্টগুলিতে সরাসরিভাবে নিয়োগ করা হবে। পরবর্তীকালে এটি চ্যালেঞ্জ হবার পর সুপ্রিম কোর্ট ১৬ ই নভেম্বর ১৯৯২ সালে, ইন্দিরা সোহনির মামলা অনুসারে ক্রিমি লেয়ার বাদ দিয়ে ওবিসি দের জন্য ২৭% রিজার্ভেশন রেখেছিল। পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আরএন প্রসাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল যারা ক্রিমি লেয়ার নির্ধারণ প্রক্রিয়াটি চালিয়েছিলেন এবং ৮ ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনাল এন্ড ট্রেনিং (ডিওপিটি) নির্দিষ্ট শ্রেণী/মর্যাদা/আয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের তালিকাভুক্ত করেছে যাদের সন্তানরা ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা নিতে পারে না ।
এই নিয়ম অনুসারে যারা সরকারি কর্মচারী নয়, তাদের ক্ষেত্রে বর্তমান সীমা হল বছরে ৪ লক্ষ টাকা আয় এবং সরকারি কর্মচারীদের শিশুদের জন্য এই নিয়ম তাদের পিতা-মাতার পদমর্যাদার উপর ভিত্তি করে হয়। বিশেষ দ্রষ্টব্য ১৪ ই অক্টোবর ২০০৪ সালে জারি করা ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনাল এন্ড ট্রেনিং (ডিওপিটির) ব্যাখ্যা অনুযায়ী কোন মানুষের ক্রিমি লেয়ার নির্ধারণ করার সময় বেতন বা কৃষিজমি থেকে আয়কে যোগ করা হবে না।
সাম্প্রতিকালে আটটি লোকসভা এমপি (বিজেপির সাতজন এবং কংগ্রেসের একজন) ওবিসি দের নির্ধারণ প্রক্রিয়া সংশোধনের জন্য মুলতুবি প্রস্তাব সম্পর্কে দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যার জবাবে, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক ২০ জুলাই বলেছিলেন: “ওবিসিদের মধ্যে ক্রিমি লেয়ার (creamy layer) নির্ধারণের জন্য আয়ের মানদণ্ড সংশোধনের প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।” এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভায়, তিনজন সাংসদ (সমাজবাদী পার্টির দুজন এবং কংগ্রেসের একজন) জিজ্ঞাসা করেছেন যে শুধু ওবিসি প্রার্থীদের জন্য সরকারি পরিষেবাগুলির জন্য ক্রিমি লেয়ারের বিধান যুক্তিসঙ্গত কিনা। এই প্রসঙ্গে ২২ শে জুলাই রাজ্য মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ইন্দিরা সোহানির রায় (সুপ্রিম কোর্টের ) এর কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের সিভিল সার্ভিস ব্যাচে ৬৩ জন ক্যান্ডিডেট সিলেক্ট হয়েছিলেন আইএএস পরীক্ষায়, কিন্তু তাদের নিয়োগ পত্র প্রদান করা হয়নি কারণ তারা ক্রিমি লেয়ার অধীনে ছিলেন না। আয়ের সীমা ছাড়া ক্রিমি লেয়ার এর বর্তমান রূপ এরকমই হয়ে গেছে যেটা ডি ও পি টি সঙ্গে এক। যেটা ৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে লেখা হয় এবং ২৪ শে অক্টোবর ২০০৪ সালে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল। সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়নের মন্ত্রী (Social Justice and Empowerment) কৃষাণ পাল গুর্জার মার্চ মাসে সংসদে বলেন যে, “ক্রিমি লেয়ার এর নিয়মের কোন পরিবর্তন হয়নি”।
ডিপার্টমেন্ট অফ পার্সোনাল এন্ড ট্রেনিং (ডিওপিটির) নিয়ম অনুসারে প্রতি তিন বছর পর পর নির্ধারণসহ সংশোধন করা হবে ,কিন্তু ১৯৯৩ সালে ৮ সেপ্টেম্বর (প্রতি বছর 1 লক্ষ টাকা) প্রথম সংশোধন করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৯ মার্চ(2.50 লক্ষ টাকা) এবং ২০০৮ সালে অক্টোবর মাসে (4.50 লক্ষ টাকা) এবং এর পরবর্তী ২০১৩ সালের মে মাসে (6 লক্ষ টাকা), ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাসে (৮ লক্ষ টাকা) এই সংশোধন করা হয়। কিন্তু শেষ পুনর্নির্বাচনের বহু বছর কেটে গেলেও কোনরকম নির্বাচন সংশোধন করা হচ্ছে না।
২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি প্রতিবেদন অনুসারে তৎকালীন বিজেপি সাংসদ গণেশ সিং এর নেতৃত্বে ওবিসি কল্যাণ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি উল্লেখ করেছিল যে “তিন বছর পর আয়সীমা সংশোধনের বিধান সরকার অনুসরণ করছেন না যার ফলে সংশোধনের একটা বড় গ্যাপ লক্ষ করা যাচ্ছে এবং এটি কখনোই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় তাই সরকার নিজেই নিজের নির্ধারিত মান লংঘন করছে”একটি মন্ত্রিপরিষদ নোটে উল্লেখ করেন যে কৃষি আয় ছাড়া নির্ধারিত বেতন সহ সকলের উপর ক্রিমি লেয়ার এর আয়কর নির্ধারিত করা হবে। ডি ও পি টি সুপার বিপি শর্মার নেতৃত্বে একটি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছিল যে ৮ শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে এর আবার পর্যালোচনা করার কথা বলেন । মাননীয় এমপিদের বিক্ষোভের কারণে এই পদক্ষেপ বর্তমানে আটকে আছে এবং সরকারের বর্তমানের অবস্থান হল”পর্যালোচনা বিবেচনাধীন”।
এমপি গণেশ সিং, গত বছরের ৫ জুলাই বিজেপির অন্যান্য ওবিসি সাংসদদের চিঠি লিখেছিলেন যে “বার্তা, টুইট” এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করতে যে ক্রিমি স্তর নির্ধারণ করতে তারা বেতন এবং কৃষি আয় কে বার্ষিক পারিবারিক হিসাবে না ধরা হয় । ২১ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে লোকসভায় প্রস্তাব উত্থাপনের পর ২০১২ সালের জুন মাসে এই কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে লোকসভা থেকে 18 জন এবং রাজ্যসভা থেকে আটজন সদস্য রয়েছে এবং এর নেতৃত্বে রয়েছেন লোকসভার রাজেশ ভার্মা (বিজেপি)। গত বছরের ২১ জুলাই, অমিত শাহ একটি সভা ডেকেছিলেন যেখানে এনসিবিসি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং এতে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) ভূপেন্দ্র যাদব ছিলেন। এনসিবিসি প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় সরকারী চাকরিতে ওবিসিদের দুর্বল প্রতিনিধিত্বের কথা তুলে ধরেন এবং সাধারণ শ্রেণীর প্রার্থীদের দ্বারা বেশ কয়েকটি ওবিসি-সংরক্ষিত পদগুলি ফাইলগুলিতে নোট করে পূরণ করা হচ্ছিল যা “কেউই উপযুক্ত বলে মনে করেনি।” অমিত শাহ তাদের এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে এবং আবার দেখা করতে বলেন। সবশেষে বর্তমান সময়ে ওবিসিদের (OBC)মধ্যে ক্রিমি লেয়ার (creamy layer) নির্ধারন এর সাথে সাথে schedule tribe (st) এবং schedule caste (sc)দের মধ্যেও ক্রিমি ও নন ক্রিমি লেয়ারের নির্ণায়ক প্রক্রিয়াকে সহজ ও সুপরিকল্পিত করা আবশ্যিক।