লেখিকা সাবাতিনি চ্যাটার্জী
সম্প্রতিকালে পেগাসাস ব্যবহার প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথম একটি কমিটি নিয়োগ এর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যা কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে । ইসরাইলি সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা এন এস ও গ্রুপ দাঁড়া প্রকাশিত পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ফোনের গোপন তথ্য ওপর নজরদারির বিষয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুর এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য প্রমূখ ব্যক্তিত্বরা এই কমিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মনে করা হচ্ছে তৎকালীন এই কমিটি সরকার এবং বিরোধী দলের সাংবাদিক কর্মীদের ,পুলিশ কর্মকর্তা ,রাজনীতিবিদদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখবেন।
কমিশন অফ ইনকয়েরি অ্যাক্ট 1952 এর অধীনে বলা আছে সরকার কর্তৃক গঠিত একটি কমিশনভারতের যেকোনো প্রান্ত থেকে কোন ব্যক্তির উপস্থিতি এবং শপথের সময় তাকে উপযুক্ত পরীক্ষা করা এবং প্রমাণ গ্রহণ করা এবং এটি যে কোনো পাবলিক রেকর্ড অথবা কোনো আদালত বা অফিস থেকে অনুলিপি অর্ডার এর মাধ্যমে করতে পারে। আইনের 5 নম্বর ধারা অনুসারে কমিশনের ক্ষমতা আছে যে কোন ব্যক্তির প্রয়োজন বিশেষাধিকার সাপেক্ষে সেই ব্যক্তির দ্বারা বলা কোন বিষয় কোন আইনের অধীনে দাবি করা যেতে পারে , বিশেষ দ্রষ্টব্য এইরকম পয়েন্ট বা বিষয়গুলির ক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহ করার জন্য কমিশনের মতামত অনুসন্ধানের বিষয় বস্তু গুলোর জন্য প্রাসঙ্গিক এবং যথোপযোগী হতে পারে।
মূলত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়ই এই ধরনের কমিশন গঠন করতে পারে তবে রাজ্যগুলি বিষয়বস্তুগুলো দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে এবং সেই বিষয়গুলোর উপর তারা আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতাও রাখে। এক্ষেত্রে কে প্রথম তদন্তের আদেশ দিল সেটি গুরুত্ব পূর্ণ কারণ এটি শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয় আইনের অধীনে সমানভাবে দর্শনীয়। প্রসঙ্গত যদি কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে কমিশন গঠন করেন তাহলে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া এই বিষয়ে সমান্তরালভাবে কমিশন গঠন করতে পারে না। কিন্তু যদি কোন রাজ্য একটি কমিশন নিয়োগ করে তাহলে কেন্দ্র একই বিষয়ে আরেকজনকে নিয়োগ করতে পারে যদি তদন্তের সুযোগ দুই বা ততোধিক রাজ্যে প্রসারিত করার প্রয়োজন হয়।
পেগাসাস প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি কমিটি নিয়োগ এর পদক্ষেপ কেন্দ্রকে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করবে।ভারতে নজরদারির ইতিহাস অতীত থেকেই লক্ষণীয় যে একটি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় মধ্যে বহুবার রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছে যার ফলে একই বিষয়ে বিভিন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ 2002 সালে যখন নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন রাজ্য সরকার তখন গোধারা ট্রেন পোড়ানো এবং পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তের জন্য তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি টি নানাবতী এবং এএইচ মেহতার একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে কমিশন তার রিপোর্টে রাজ্য সরকারকে ক্লিনচিট দেয়। 2004 সালে কংগ্রেস নেতৃত্বের অধীনে থাকা ইউপিএ সরকার তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ইউসি ব্যানার্জির অধীনে একটি বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। ব্যানার্জি কমিশন রাজ্য কমিশনের বিপরীতে ফলাফলগুলি রিপোর্ট করেছিলেন।
প্রসঙ্গত হাজার 1952 আইনের ধারা 2 (a) এর অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গঠিত কমিশনের তালিকা 1 এ,(ইউনিয়ন তালিকা), তালিকা 2( রাজ্য তালিকা) এবং তালিকা 3( সমান তালিকা) সংবিধানের সপ্তম তপশিলি এর মধ্যে সরকার দ্বারা গঠিত কমিশন সরকারের তালিকা 2এবং 3এর সব নথি দেখতে পারে।
পেগাসাস তদন্ত কমিশনের পশ্চিমবঙ্গ সরকার শৃঙ্খলা এবং পুলিশের প্রবেশ উল্লেখ করেছে যদিও এই বিষয়গুলি রাজ্য সরকারের তালিকার অন্তর্ভুক্ত তবুও এই প্রসঙ্গে তদন্তের বিষয়গুলো কিছু ক্ষেত্রে মূলত কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্গত।ইউনিয়ন তালিকার 31 নম্বর এন্ট্রি অনুসারে পোস্ট এবং টেলিগ্রাফ , টেলিফোন্ওয়ারলেস, ব্রডকাস্টিং এবং অন্যান্য ধরনের যোগাযোগের সাথে সম্পর্কিত।
প্রসঙ্গত এই কমিশনের ফলাফলগুলো কিভাবে গঠন করেছে তার উপর নির্ভর করে বিধানসভা বা সংসদে উপস্থাপন করা হয়। পেগাসাস প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লোকুর কমিশনকে ছয় মাসের সময় দিয়েছেন এবং এই সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রসঙ্গত সরকার জনসমক্ষে রিপোর্ট প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। সঠিক সময়ের মধ্যে পেগাসাস তদন্তের স্বার্থে আদালতের উপর নির্ভর করা যেতে পারে।