By : Sabatini Chatterjee
সাম্প্রতি 7 ই আগস্ট জাতীয় তাঁত দিবস 2021 সারা দেশে তাঁতীদের সম্মান করে এবং ভারতীয় তাঁত শিল্পের উত্তরাধিকার তুলে ধরে। এর লক্ষ্য হল শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা, সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আগ্রহ ও অবদান বৃদ্ধি করা। ভারতের তাঁতশিল্প এই দেশের সংস্কৃতি নির্ধারনে চিরকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সময় উপযোগী যোগ্য সম্মান এবং সঠিক মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্ত্র মন্ত্রণালয় তাঁত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে। এ বছর নয়াদিল্লির কনভেনশন সেন্টারে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভারতে বয়ন পদ্ধতির একটি দীর্ঘ উত্তরাধিকার রয়েছে কিন্তু মেশিনের যুগে, পুরানো কাপড় উৎপাদন কিছু আকর্ষণ হারিয়েছে। ২০১৫ সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 7 ই আগস্টকে জাতীয় তাঁত দিবস হিসেবে 1905 সালের স্বদেশী আন্দোলনের একশো বছরের উদযাপনের সাথে চালু করেছিলেন।
জাতীয় তাঁত দিবসে এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার গুরুদায়িত্ব পালন করা উচিত. আমাদের দেশের বস্ত্র সবসময় সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের প্রতীক। রাজস্থানী বানকেজে প্রাণবন্ত রং থেকে শুরু করে কাশ্মীরের জটিল সূচিকর্ম গুজরাটের উজ্জ্বল থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর চিরন্তন কাঞ্জিভরম এর অপূর্ব ঝলক সবমিলে ভারতীয় বস্ত্র আমাদের দেশের সভ্যতার একটি অমূল্য উপাদান। এদেশের টেক্সটাইল এর ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের পূর্বসূরী বহু উৎস পাওয়া গেছে। মানব সভ্যতার একেবারে শুরুর দিক থেকে বিচার করলে দেখতে পাওয়া যায় সিন্ধু উপত্যাকায় পাওয়া বস্ত্রের প্রাচীনতম রূপগুলো বস্ত্র তৈরীর ক্ষেত্রে একটি অতি উন্নত সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে যাকে কেন্দ্র করে মানব সভ্যতার ভিত গড়ে উঠেছিল।
প্রাচীনকাল থেকেই তুলো চাষ এবং তাঁত শিল্পের অন্যতম পীঠস্থান হল ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বড় অংশ যা প্রমাণ করে ভারত বর্ষ কতটা সমৃদ্ধ। মূলত মনে করা হয় এখান থেকে এই জ্ঞান পূর্ব থেকে চীন ,দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ,পারস্য, এবং পশ্চিম এশিয়ার বাকি সমস্ত অংশের ছড়িয়ে পড়ে। যত সময় এগিয়েছে ভারতীয় টেক্সটাইল গুলো ততই বিভিন্ন কৌশল কে একাত্ম করেছে যা স্বদেশীয় আদিম মানুষদের নিজস্ব কর্মের ছাপ হিসেবে রয়ে গেছে।
বুনন শিল্প প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত থাকলেও বর্তমানকালে এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে বাণিজ্যিক প্রভাব। বুনন ও তাঁত শিল্পের প্রসার লাভের জন্য নতুন নতুন এমব্রয়ডারী স্কুল কলেজ এবং প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিল্পের সমন্বয় তৈরি করা হচ্ছে। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে পারস্য এবং চীনের আজরাখ, জোরাসট্রেন অনবদ্য আবিষ্কার। একই সঙ্গে কাশ্মীরের কার্পেটের ডিজাইন এবং বেনারসের বক্সের মধ্যে মুঘলদের ছাপ পাওয়া যায়।ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল রাজকীয় ঐতিহ্যের দ্বারা সমৃদ্ধ। চোল চেরা পান্ডব সাম্রাজ্যের ত্রিমুখী প্রভাবের ফলে ভারতীয় প্রেমের সম্পর্ক গুলিকে শিল্পীরা তাদের কাজে ফুটিয়ে তুলেছেন। সঙ্গম সাহিত্যে টেক্সটাইল অলঙ্কারের উল্লেখগুলি এই বিশ্বাসকে আরও বিশ্বাস দেয় যে দ্রাবিড় রাজবংশের একটি উত্তরাধিকার টেক্সটাইলকে তাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অভিব্যক্তি হিসাবে ব্যবহার করেছিল।
এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে সেই বস্ত্র আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসের একটা বড় অংশ হিসাবে পরিচিত কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চায় এবং ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর দিতে হবে। আদিমকাল থেকে পোশাকের তৈরির ফ্রম হিসেবে কাটছাঁট কাপড় ব্যবহারের প্রথা প্রচলিত ছিল। মূলত প্রাচীন বিশ্বাসের দ্বারা এরকম চল আছে যে মহাবিশ্ব হলো পরম স্রষ্টার হাতে বোনা এক নিপুণ কারিগরি, তাই বুনন শিল্পের কেন্দ্র বিন্দুতে কাপড়ের ব্যবহার এবং পদ্ধতির প্রয়োগে ধর্মীয় গুরুত্ব বিদ্যমান ছিল।
ব্রিটিশদের আবির্ভাব ভারতবর্ষে বস্ত্রশিল্পে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। কাঁচামালের উৎস হিসেবে ভারতবর্ষকে ব্যবহার করা ব্রিটিশ নীতি এবং ব্রিটিশ মিল তৈরি কাপড়ের জন্য অনেক অর্থনৈতিক শোষণের উদাহরণ পাওয়া যায়। যার ফলস্বরুপ ব্রিটিশ কাপড় পরিত্যাগ করার আহ্বান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা বস্ত্রের সাথে আমাদের জাতীয় ঐতিহাসিক সংযোগকে আরো ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। প্রাসঙ্গত ,জুলাই মাসে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ অনুষ্ঠানের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রী পরিষদের সকল মহিলারা সুন্দর তাঁতের শাড়ি পরার সময় এটি দেখার মতো ছিল। আনেকেই মনে করেন ভারতজুড়ে তাঁতী সম্প্রদায়ের সমর্থনকারী ব্র্যান্ডগুলি এই পদক্ষেপ,এটি ক্রমহ্রাসমান নৈপুণ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে অনেক দূর যেতে পারে। রাজ্যের স্থানীয় হস্তশিল্প পণ্যের প্রচারের জন্য, বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সহযোগিতায় কোভালাম, তিরুঅনন্তপুরম, কেরালা, মোহপাড়া গ্রাম, জেলা গোলাঘাট, আসাম এবং কানহামা, বুদগাম, শ্রীনগরে হ্যান্ডলুম ক্রাফট গ্রাম স্থাপন করছে।