গুরুতর অপুষ্টির(Malnutrition) সমস্যায়ে ভারতের ক্রমাগত শীর্ষমুখী অবস্থান

चिकित्सा

By Sabatini Chaterjee

          অপুষ্টি (Malnutrition) বলতে বোঝায় একজন ব্যক্তির শরীরে পুষ্টি গ্রহণের ঘাটতি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তির ভারসাম্য হীনতা। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) 2020, রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যার 14% অপুষ্টিতে ভুগছে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স 2020 -এ ভারত 107 টি দেশের মধ্যে 4 তম স্থানে রয়েছে। অপুষ্টির বিচারে ভারতের স্থান নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলের যথেষ্ট চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মনে করা হয় দুর্বল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ এর এবং অপুষ্টি মোকাবিলায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অভাব তথাপি দেশের বড় বড় রাজ্য গুলি দুর্বল কর্ম ক্ষমতা আজ দেশকে গুরুতর অপুষ্টি এবং ক্ষুধার্থ নাগরিকের তালিকা শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে।

          মূলত তিনটি সাধারন লক্ষণের মাধ্যমে আমরা অপুষ্টি কে বুঝতে পারি, যথা –

  • প্রথমেই রয়েছে অপুষ্টি জনিত সমস্যা যার মধ্যে উচ্চতার জন্য কম ওজন (wasting),অনুযায়ী কম উচ্চত( stunting) বয়স অনুযায়ী কম ওজন ( underweight) .
    • দ্বিতীয়ত, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি (গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেলের অভাব) বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অতিরিক্ত পরিমানে উপস্থিত।
    • তৃতীয়ত, অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা এবং খাদ্য সম্পর্কিত অসংক্রামক রোগ (যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সার)।

          জিএইচআই  সূচকের ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশগুলো যথা বাংলাদেশ-মায়ানমার এবং পাকিস্তান ও গুরুতর ভাবে অন্তর্ভুক্ত ক্যাটাগরিতে রয়েছে কিন্তু এই বছর ক্ষুধা সূচকে ভারত এর চেয়ে বেশি স্থান পেয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান 75, মায়ানমার 78 এবং পাকিস্তান 44 তম স্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ক্ষুধার সূচকে দেখা  গেছে নেপাল 73 তম স্থানে এবং শ্রীলংকা 64 তম স্থানে রয়েছে। সর্বোপরি গ্লোবাল হালদার ইনডেক্স এ বেশ কিছু দেশ জি এইচ আই স্কোরে ভিত্তিতে 5 এর নিচে আছে সেই দেশগুলো যথাক্রমে চীন, বেলারুশ, ইউক্রেন, তুরস্ক, কিউবা এবং কুয়েত সহ সতেরোটি দেশ। 2019 সালে এই ক্ষেত্রে 117 টি দেশের মধ্যে ভারাতের স্থান ছিল 102।

          শুধু তাই নয় এটি আরও দেখিয়েছে যে দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে 37.4 শতাংশ স্ট্যান্টিং, 17.3 শতাংশ ওয়াস্টিং এর শিকার। মূলত তথ্য অনুসারে পাঁচ বছরের কম বাচ্চাদের মধ্যে মৃত্যুর হার 3.7 শতাংশ। 1991- 2014 সালের তথ্যের উপর যদি আমরা নজর রাখি তাহলে দেখতে পাব বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, নেপাল এবং পাকিস্তানের জন্য স্টার্টিং সমস্যা সার্বভৌম এবং এর কারণ হিসেবে পরিবারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা খাদ্যের বৈচিত্র, বঞ্চনা, মায়েদের অশিক্ষা ক্রমবর্ধমান দারিদ্রতা ইত্যাদি দায়ী।

          যদিও প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই সময়কালে ভারত বর্ষ পাঁচ বছরের কম বয়সী এর মৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে, যেগুলোর মূল কারণ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়্ জন্মগত শ্বাসকষ্ট, ট্রমা্, এছাড়া নবজাতকের বিভিন্ন রকম সংক্রমণ ইত্যাদি থেকে মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে দুর্বল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণের অভাব এর ফলে অপুষ্টি মোকাবিলায় আজ এই অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

          ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, নয়াদিল্লির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো পূর্ণিমা মেনন বলেন, ভারতবর্ষের অপুষ্টির সূচকের সামগ্রিক পরিবর্তন দেখতে গেলে উত্তর প্রদেশ বিহার এবং মধ্যপ্রদেশের মত বড় রাজ্য গুলোর পারফরমেন্সকে আরো উন্নত করা দরকার, ইউপি বিহারের মতো রাজ্যগুলির দাঁড়া জাতীয় গড় অনেকটা প্রভাবিত হয়। তিনি পিটিআইকে জানান,”ভারতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি পঞ্চম শিশু উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সুতরাং যদি জনসংখ্যা বেশি থাকে এমন রাজ্যে উচ্চস্তরের অপুষ্টি থাকে তবে এটি ভারতের গড় অপুষ্টির জন্য অনেকটা অবদান রাখে। স্বাভাবিকভাবেই সেক্ষেত্রে অপুষ্টির গড় অনেকটাই প্রভাবিত হবে”। প্রসঙ্গত তিনি আর বলেন, “সুতরাং, যদি আমরা ভারতে পরিবর্তন চাই তবে আমাদের উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এবং বিহারেও পরিবর্তন দরকার”।

          পুষ্টি গবেষণার প্রধান এবং ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের অতিরিক্ত অধ্যাপক শ্বেতা খান্ডেলওয়াল বলেন, “পুষ্টির ক্ষেত্রে কর্মসূচী ও নীতির সবচেয়ে প্রভাবশালী পোর্টফোলিওগুলির আমাদের দেশের রয়েছে , তবে বাস্তব ক্ষেত্রে অনেকটাই হতাশাজনক”

          তিনি পিটিআইকে বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে যে আমাদের শীর্ষ-নীচের পদ্ধতি, দুর্বল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, কার্যকর পর্যবেক্ষণের অভাব এবং অপুষ্টি মোকাবেলায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি (অভাবনীয় অভাব) প্রায়শই দুর্বল পুষ্টি সূচকে পরিণত হয়। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিকে প্রতিটি সেক্টরে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই একীভূত করতে হবে“। তিনি পাঁচটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন যথা, “পুষ্টিকর, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের খাদ্যের প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত করুন এবং প্রচার করুন; গর্ভাবস্থা, শৈশব, এবং শৈশবকালের মাধ্যমে মাতৃ ও শিশুর পুষ্টি উন্নত করতে বিনিয়োগ করুন; শিশু নষ্টের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিত্সার জন্য পুনরায় সক্রিয় এবং স্কেল-আপ পরিষেবা; দুর্বল শিশুদের জন্য পুষ্টিকর এবং নিরাপদ স্কুলের খাবারের ব্যবস্থা রাখা এবং পুষ্টিকর ডায়েট এবং অত্যাবশ্যক সেবার সুরক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা প্রসারিত করা ”।

          কোন এককভাবে সমাধানের পরিবর্তে একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে সামগ্রিকভাবে একাধিক ধরনের অপুষ্টি রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে যা জলবায়ু বান্ধব সাশ্রয়ী মূল্যের এবং সকলের জন্য সহজলভ্য হয়। ভবিষ্যতে অপুষ্টি দূরীকরণে সমন্বিতভাবে প্রচার এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি গুলো প্রয়োগ এর মাধ্যমে দেশের উন্নতি সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *