NRC (এনআরসি) বা জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন এর দুবছর পরেও আসামে এখনো চরম অচলাবস্থা বর্তমান

राष्ट्रीय एवं अंतर्राष्ट्रीय मुद्दे

       জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন প্রিক্রিয়া (National Register of Citizens [NRC]) আসামের মানুষের নাগারিক সম্মান কে এক চরম প্রশ্নের সামনে এনে দাড় করিয়েছে যেখানে তাদের জীবন মৃত্যুর সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। সম্প্রতি পাওয়া খবর আনুসারে, 27.43 লক্ষ লোকের আধার (Aadhar) তালিকাভুক্তি স্থগিত করা হয়েছে এবং শীঘ্রই এই সমস্যা দূরীকরণের কোন প্রয়াস সরকার থেকে করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও তদারকিতে তৈরি হওয়া এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া তালিকা 2019-এর 31 অগস্ট প্রকাশিত হয়। তাতে আসামের 3 কোটি 30 লক্ষ আবেদনকারীর প্রায় 19 লক্ষ 7 হাজার বাসিন্দার নাম বাদ গিয়েছে বলে অভিযোগ। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে ফের একবার তার যাচাইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্রিয় সরকার। কিন্তু 2019-এর 12 আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত বলা ভালো যে, NRC (এনআরসি ) সংক্রান্ত অনুশীলনের স্থবিরতা রাজ্য জুড়ে আরও 8.37 লক্ষেরও বেশি লোককে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ খসড়া প্রকাশের আগে সংগৃহীত 27,43,396 জনের বায়োমেট্রিক বিবরণ এখনও স্থগিত  রয়েছে।

       ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি অসমের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, 1971 সালের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যে শরণার্থীরা চলে এসেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। কারণ, এনআরসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের পেশ করা শরণার্থী শংসাপত্রকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেনি। প্রসঙ্গত, অসম সরকার এবং কেন্দ্র এর আগে অভিযোগ তুলেছিল অনেক অযোগ্য ব্যক্তির নামও এনআরসি-র খসড়া তালিকায় স্থান পেয়েছে।

       আসামে মোট জনসংখ্যার প্রায় 31 শতাংশ মানুষ অনুপ্রবেশকারী মুসলিম। সে রাজ্যে 121 টি বিধানসভার মধ্যে অন্তত 35 টি বিধানসভায় তারা নির্ণায়ক গোষ্ঠী। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘এই ভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে অন্যরা কী করবেন! মানুষের তো থাকার জায়গাই থাকবে না। জনসংখ্যার সমস্যার সমাধান হলে অনেক সামাজিক সমস্যারও সমাধান হবে, তার ব্যক্তব্য।’’

       সিনিয়র অ্যাডভোকেট হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেছেন,” এনআরসি প্রক্রিয়াটি তার সঠিক উপসংহারে নিয়ে যাওয়া উচিত বা নির্ধারিত সময়সূচীর মধ্যেই চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অনুশীলনের স্থগিতাদেশ অনেকের কাছে আধার কার্ডের মতো নথি প্রত্যাখ্যান করেছে, যখন হাজার হাজার মানুষ রেশন কার্ড এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,।

NRC ( এনআরসি)  সংক্রান্ত উদ্বেগ এর গ্রাসে সাধারন জনগন-

                NRC (এনআরসি)  সংক্রান্ত এই অচলাবস্থা মানুষের মনে সৃষ্টি করেছে উদ্বেগ যা দিন দিন আরও ভয়াবহ রুপ ধারন করছে।  এনআরসি সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান  ত্রা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমাগত আঘাত করেছে। প্রসঙ্গত , ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) 27.43 লাখ লোকের বায়োমেট্রিক বিবরণ সংগ্রহ করেছিল যাদেরকে প্রাথমিক ভাবে প্রস্তুত 2018 সালে 31 শে ডিসেম্বর প্রকাশিত তালিকা থেকে বের করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে 8.7 লাখ লোক আট মাস পরে প্রকাশিত এনআরসির খসড়ায় স্থান পেয়েছিল। 2018 সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) অনুসরণ করে বায়োমেট্রিক্স সংগ্রহ করা হয়। এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবির শুনানির সময় আঙুলের ছাপ, রেটিনা স্ক্যান এবং অন্যান্য বিবরণ সংগ্রহ করা হয়েছিল যাতে ভুলভাবে নাগরিক তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের সনাক্তকরণ এবং অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া আরও সঠিক হয়।  এই শুনানি গুলো পরিচালিত হয়েছিল জানুয়ারি মাসে সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ আগে।

কেন্দ্রের অনুমোদনের অপেক্ষায় বায়োমেট্রিক্স বিলম্বিত হওয়ার কয়েকটি কারণ-

       ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল (RGI) এখনও NRC—এর বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি, যা তালিকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।2013 সাল থেকে মহড়াটি তত্ত্বাবধানকারী সুপ্রিম কোর্ট 2020 সালের জানুয়ারি থেকে এনআরসি সংক্রান্ত মামলার শুনানি এখনও করেনি। তাই সমস্যা আরও জটিলতর হয়ে গেছে। এনআরসি রাজ্য সমন্বয়কারী (NRC State Coordinator) হিতেশ দেব গোস্বামী 2020 সালের ফেব্রুয়ারিতে, আসাম সরকারকে 8.37 লাখ মানুষের বায়োমেট্রিক বিশদটি তালিকায় ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

       রাজ্যের স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগ জানিয়েছে এবং কেন্দ্রিয় বিভাগ এই প্রসঙ্গে একি সুরে নিজেদের দায়ে এড়িয়ে যায়। গুয়াহাটিতে ইউআইডিএআই -এর আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “এনআরসি ক্লাউড” -এর আধার নম্বর জারি করা যাবে না যতক্ষণ না আরজিআই -এর তরফে বিভাগটির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানো হয়।

প্রত্যাখ্যান করা স্লিপ সঙ্ক্রাত জটিলতা-

                RGI এর বিজ্ঞপ্তি ছাড়া, NRC কর্তৃপক্ষ রেজিস্টার থেকে বাদ পড়া 19.06 লক্ষ লোককে প্রত্যাখ্যানের স্লিপ জারি করতে পারে না। এই ধরনের একটি স্লিপ একজন ব্যক্তির তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণগুলির বিভিন্ন রূপরেখা দেয়।

       এসওপি (Standard Operating Procedure [SOP]) অনুসারে, বাদ দেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে স্লিপ পাওয়ার 120 দিনের মধ্যে একটি বিদেশী ট্রাইব্যুনালে (Foreigners Tribunal) আপিল করার জন্য প্রত্যাখ্যানের স্লিপ জারি করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালগুলি তখন তাদের মামলার শুনানি করবে রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির জন্য বা ভালোভাবে বাদ দেওয়ার জন্য। ত্রুটিপূর্ণ বা যথাযথ নথির অভাবের জন্য যাদের বাদ দেওয়া হয়েছিল তাদের বাদে ডিএফ, ডিভি এবং পিএফটি – “ঘোষিত বিদেশী”, “সন্দেহজনক ভোটার” এবং “ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন” এর সংক্ষিপ্তসার অন্তর্ভুক্ত। প্রসঙ্গত এহেন জটিলতার জন্য এই এখনো চরম অচলাবস্থা  বর্তমান।

       ডিভি (DV) গোরখাস এই প্রসঙ্গে বক্তব্য  দেয়,  বহিষ্কৃতদের অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলমান এবং হিন্দু যারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে এসেছে বলে সন্দেহ করা হয়। প্রায় এক লাখ ‘ডিভি’ গোর্খা, যারা আসাম সরকার একটি সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সম্প্রদায়কে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআরসি -তে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুলতুবি থাকা মামলাগুলিও প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং ভোটার তালিকায় সম্প্রদায়ের সদস্যদের DV ট্যাগ অপসারণ করতে বলা হয়েছিল।“এনআরসি বাদ দেওয়া কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য ছিল যারা 1985 সালের আসাম চুক্তিতে উল্লিখিত ‘নির্দিষ্ট অঞ্চল’ থেকে 24 শে মার্চ, 1971-এর পরে আসামে এসেছিল, তাদের জন্য অফ টাইমলাইন প্রযোজ্য ছিল না”।        তিনি বলেছিলেন, “যদি বিজ্ঞপ্তিটি যথাসময়ে অক্ষরে অক্ষরে প্রযোজ্য হয়, তাহলে ডিভি এবং পিএফটি ট্যাগের কারণে এনআরসি থেকে বাদ পড়া গুর্খারা চূড়ান্ত রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এনআরসি প্রক্রিয়ার সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরে এবং ফলাফলটির আসল প্রকাশ দেখা গেলেই সম্প্রদায় এই অভিপ্রায়কে বিশ্বাস করবে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *